Ameen Qudir

Published:
2020-03-10 17:37:44 BdST

"চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা" নিশ্চিত করতে "বিশেষ নিরাপত্তা আইন"


 

চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা কই! তাদের লড়াই করতে হয় একদল হামলাবাজ দানব সন্ত্রাসী র সঙ্গে। আর সর্বক্ষণ লড়তে হয় রোগব্যাধির সঙ্গে। সে লড়াই রোগীর মাঝে এনে দেয় নয়া প্রাণ। কিন্তু ডাক্তাররা না পান নিরাপত্তা ; না পান সম্মান। সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন
ডা. আজাদ হাসান

ডা. আজাদ হাসান
______________________

সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে শুরু করে জেলা হাসপাতাল কিংবা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কোথাও ডাক্তাররা আজ আর নিরাপদ নয়।
সামাজিক অস্থিরতা, সাধারণ মানুষের অসহিষ্ণুতার, সরকারি হাসপাতালের সীমাবদ্ধ, সর্বোপরি ক্ষেত্র বিশেষে অসুস্থ রাজনৈতিক পৃষ্ঠ পোষকতা এই পরিস্থিতিকে আরো তিক্ত থেকে তিক্ততর করে তুলেছে। ক্রমাগত চিকিৎসক পেশা নিয়ে মিডিয়ার অপপ্রচার এবং সেসব সংবাদ জোড়ালো ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে জনগণের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে ব্যর্থ্য চিকিৎসক সংগঠন সমূহ তথা চিকিৎসক নেতৃত্বের ব্যর্থতা এই পরিস্থিতিকে আরো বিষিয়ে তুলেছে।

এহেন পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য আমাদের ডাক্তার নেতৃত্বকে অনতিবিলম্বে কতিপয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিভিন্ন ফোরামে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ সুশীল সমাজ
সর্বদা চিকিৎসকদের কেবল রোগীর সাথে ভালো ব্যবহার করুন ছবক দেন, কিন্তু কেউ ডাক্তারদের নিরাপত্তার কথা বলে না।

সম্মানিত বক্তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয়, কেবল চিকিৎসকরাই হাসপাতালে ঘটে যাওয়া সব ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য দায়ী(!) আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি তা হলে দেখতে পাবো বিগত এক বছরে সমগ্র দেশে সরকারী হাসপাতালে যতগুলো আক্রমন হয়েছে, চিকিৎসকরা শারীরিক ভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন, মহিলা চিকিৎসকরা নিগৃহীত হয়েছেন, তা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে উদ্বেগ জনক হারে বেশী। অথচ আজ পর্যন্ত এর একটি ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচার হয়েছে বলে পত্রিকায় আসে নি। যা দূর্বৃত্তদেরকে আরো দূর্বিনীত আচরণ করতে উৎসাহিত করেছে। অথচ অত্যন্ত দুঃখের ও পরিতাপের বিষয় এক্ষেত্রে সব সুশীলরা এক্ষেত্রে রহস্য জনক ভাবে নিশ্চুপ।

আর তাই "কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা"র বিষয়টিকে আইনী কাঠামোর ভেতর আনতে হবে এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে~
" কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা আমার অধিকার,
আর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা আমার পেশাগত অঙ্গীকার"।

অতীতে আমরা আমাদের এধরণের সমস্যা সমূহ বারবার কেবল লোকালি ম্যানেজ করেছি। তাই সাধারণত জনগনও জানেন না, পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ এবং আমরা অর্থাৎ চিকিৎসকরা সার্বিকভাবে কতটা মানসিক যন্ত্রণায় আছি।

আর তাই আমার মতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ সমূহ নেয়া এখন সময়ের দাবী।
আমার মতে গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া ইন্সিডেন্ট বা ঘটনা গুলো উল্লেখ করে, তথ্য উপাত্ত সহ, পেপার কাটিং, ভিডিও ফুটেজসহ প্রতিটি ঘটনা/ ঘটনা সমূহ প্রেস কনফারেন্স এর মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন।

সেই সাথে মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সাথে মিটিং করে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে ওনার কাছে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব তুলে ধরে "কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা" নিশ্চিত করতে ওনার সাহায্য ও সহযোগিতা চাইতে হবে।

সর্বোপরি " কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিধান সম্বলিত আইন" প্রণয়নের জন্য "স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় বিশেষ কমিটি"র সাথে মিটিং করে ওনাদেরকে বিষয় সমূহ অবহিত করতঃ এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য আহবান জানাতে হবে।

প্রসংগত উল্লেখ্য, যেহেতু বিষয়টি আইনের সাথে সম্পর্কিত তাই " নিরাপত্তার" বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীদের সমন্বয়ে একটি প্যানেল/কমিটি করে তাদের মাঝে উক্ত বিষয়টি যাচাই বাছাই সাপেক্ষে অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য, আমরা চিকিৎসক সমাজ সর্বদা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে স্থান কাল নির্বিশেষে তার প্রয়োগ সবার জন্য নিরপেক্ষ ভাবে হওয়া বাঞ্ছনীয়।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে ~
"বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ" প্রসংগে দুটি কথা।
পর্ব-২

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আনসার নয় বরং অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা যেতে পারে। ( যদিও এটিকে আমি অস্থায়ী ক্যাম্প বলছি কিন্তু এটা কাজে স্থায়ী ক্যাম্প হবে, যেমনটি ইউনিভার্সিটিতে থাকে।) প্রসংগত উল্লেখ্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা তথা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা "সরকারী নিরাপত্তা সংস্থা"র, এবং সেক্ষেত্রে "পুলিশ বাহিনী" তার দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।

আর তাই উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল সহ প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, প্রতিটি হাসপাতালের প্রবেশ পথে একটি করে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি বা সেন্ট্রি পোস্ট বসাতে হবে। এবং হাসপাতালের আভ্যন্তরিণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিটি ইমারজেন্সিতে চিকিৎসকদের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তা বিধান করতে ইমারজেন্সীর গেটে এবং ভিজিটিং আওয়ারের বাহিরে অ্যাটেন্ডেন্স প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ইনডোর-এর প্রবেশ পথে আনসার সদস্যদের নিয়োগ করতে হবে।
পুলিশ সদস্যরা তাদের নির্দিষ্ট পুলিশ ব্যারাকে থাকবেন, প্রতি শিফটে ২/৩ - ৪/৬ জন পুলিশ সদস্য উক্ত নিরাপত্তা চৌকি বা সেন্ট্রি বক্সে নিরাপত্তার দায়িত্বে হাসপাতালে ডিউটিতে থাকবেন।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ সংশ্লিষ্ট থানার অধীনে থাকবেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে যে কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে আনসার সদস্যরা তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশকে ইনফর্ম করবেন। পুলিশ সম্ভব স্বল্পতম সময়ে উক্ত স্থানে পৌছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। শৃঙ্খলা জনিত কোনো মারাত্মক সমস্যা দেখা দিলে তারা দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানায় ইনফর্ম করতে পারবে এবং পুলিশ তখন দ্রুত প্রটেকশন টীম সহ আসবে, এবং আইনানুসারে ব্যবস্থা নিবে।

উক্ত বিশেষ নিরাপত্তা পুলিশ টীমের সদস্যরা আট (৮) ঘন্টা হিসেবে শিফটিং ডিউটি করবেন। ডিউটিতে এসে হাসপাতালের ইএমও সাহেবের কাছে এরাইভেল রিপোর্ট করবে এবং ডিউটি শেষে যাওয়ার সময় ইএমও সাহেব-এর নিকট থেকে ডিপার্চারের খাতায় সাইন নিয়ে ডিউটি স্টেশন ত্যাগ করবেন।।

হেলথ কমপ্লেক্স/ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুধু মাত্র তাদের একটি সেন্ট্রি বক্স-এর ব্যবস্থা করবে। উল্লেখ্য, পুলিশ সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থাও সংশ্লিষ্ট থানা করবে।

উক্ত নিরাপত্তা পুলিশকে সংশ্লিষ্ট থানা হতে তাদের নিজস্ব ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে ডিউটির শুরুতে ডিউটি স্থলে পৌঁছে দিবে এবং ডিউটি শেষে নিয়ে যাবে। পুলিশ সদস্যদের আনা নেয়া করার জন্য কোনো অবস্থাতেই ইউএইচএফপিও সাহেব-এর সরকারি গাড়ী চাইতে পারবে না।

প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।
____________________

ডা. আজাদ হাসান
সিওমেক
২১তম ব্যাচ।

আপনার মতামত দিন:


ক্লিনিক-হাসপাতাল এর জনপ্রিয়