Dr. Aminul Islam
Published:2020-12-07 01:59:50 BdST
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে
ডেস্ক
___________________
সংস্কৃতির শহর ও ভাস্কর্যের শহর কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসক সমাজ।
তারা বলেন, এ শুধু বঙ্গবন্ধুর মর্মর ভাস্কর্যের ওপর আঘাত নয়। এটা বাংলাদেশের ওপর আঘাত। মাতৃভূমি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ওপর আঘাত।
লেখক মত প্রকাশক ডা. রাসেল চৌধুরী লিখেছেন, এই ছবিতে শুধু বংগবন্ধুর ভাস্কর্যকে ভেংগে ফেলা হয়নি, স্রেফ ভাংগা হয়নি শেখ মুজিবের কংক্রিট তর্জনীকে বরঞ্চ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকেই যেনো ভেংগে ফেলার হুমকি দিয়েছে বকধার্মিক বদমাশগুলো।
পদ্মা সেতু নির্মাণ হবার শেষ লগ্নে এসে এই ছবি প্রমাণ করে, পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য যেমন ভীষণ জরুরি ছিলো ; তেমনি উগ্র, ধর্মান্ধ, অসভ্য, বলাৎকারপ্রবণ মোল্লাদের হাত থেকে এই দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষা তার চেয়ে কম জরুরি নয় । হয়তো আরো বেশি জরুরি।
কাঠমোল্লাদের যতই মাথায় হাত বুলিয়ে গণভবনে নিয়ে আদর আপ্যায়ন করা হোক না কেনো, এদের মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সারা শরীরে স্রেফ বংগবন্ধু আর আওয়ামী লীগ বিরোধিতা ছাড়া আর কিছুই নেই।
হেফাজতকে বশে আনার জন্য হাটহাজারীর শফি হুজুরের হাত ধরে যে বিষবৃক্ষ আমরা রোপন করেছি, এখনই তার মূলোৎপাটন করতে না পারলে এক অন্ধকার বাংলাদেশ আমাদের ডাকছে।
আফগানিস্তান আর ইরাকের মতো আধুনিক দেশে যেমন তালেবান আর আইএসের মতো ধর্মান্ধ ইবলিশ তৈরি হয়ে দেশ দুটিকে শেষ করে দিয়েছে, তেমনি হেফাজতের মতো ভন্ড, গোমূর্খদের নির্মূল করতে না পারার কারণে আমাদের আধুনিক, সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নও এখন বড় হোঁচট খাচ্ছে।
এদেশের তথাকথিত ওয়াজ মাহফিলগুলোতে আসলে ধর্মের নামে অধর্ম আর হিংসা বিদ্বেষের চর্চাই বেশি হয়। এইসমস্ত মাহফিলে গত কয়েকদিনের ভাস্কর্য বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় আজকের এই জঘন্যতম বহিঃপ্রকাশ বংগবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংগার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। আসন্ন শীতে ওয়াজ মাহফিলের নামে এইসমস্ত তামাশা বন্ধের দাবি জানাই।
আমাদের চোখে এটা স্রেফ ভাস্কর্য ভাংগা হলেও ওসব বদমাশরা কিন্তু এটাকে জন্মশতবার্ষিকীতে বংগবন্ধুর আদর্শকে হুংকার দিয়ে ভাংগার সফল প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবেই প্রকাশ করেছে। এখনই এদের নির্মূল না করলে একদিন এরাই দানবে পরিণত হবে।
নেত্রী কঠোর হবার সময় এসেছে এবার, ভীষণ কঠোর।
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও সঙ্গীতশিল্পী ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল লিখেছেন প্রতিক্রিয়ায়: আপনারা যারা আমার লেখালেখি নিয়ে বিরক্ত হচ্ছিলেন, যারা প্রশ্ন করেছিলেন কেন আমি ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এসব লিখছি, বা আরো স্পেসিফিক করে বললে " হুজুরদের খেপাচ্ছিস কেন " তারা আশা করি উত্তরটা পেয়ে গেছেন৷
অথচ আপনারা সেকুলার রাজনীতির ঝান্ডাবাহী এবং সুবিধাভোগী।
সমাজের উচ্ছিষ্ট ভোগী এসব মোল্লাদের মূলোৎপাটন করার সময় পেরিয়ে গেছে৷ যথেষ্ট তোল্লাই দিয়ে ফেলেছেন। উনাদের জন্য প্রচুর ক্যান্টনমেন্ট বানিয়ে ফেলেছেন৷
সময় চলে গেছে৷ সময় গেলে সাধন হয়না।
মৌলভীবাজার জেলা বিএমএর সভাপতি ডা. শাব্বির হোসেন খান বলেন , আমি নিশ্চিত, কুষ্টিয়ার এই ৪ বীরপুঙ্গব পায়ুসেনার ফেসবুক আইডি'তে বিচরণ করলে অনেককিছু জানা যাবে। তাদের হ্যান্ডসেটগুলো নিশ্চয়ই পুলিশের হাতে এসে গেছে। ওগুলোর মেসেঞ্জার, হোয়াটস এ্যাপ ইত্যাদি পুংখ্যানুপুংখভাবে ঘেটে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের চেইন অব কমান্ড এর শীর্ষ পর্যন্ত পৌছে যাবে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেই প্রত্যাশা করছি।
মামুনুল-ফয়জুলের বয়ান শুনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন দুই মাদ্রাসাছাত্র
প্রতিনিধিকুষ্টিয়া; প্রথম আলো জানান ,
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে দুজন মাদ্রাসার শিক্ষক ও দুজন মাদ্রাসার ছাত্র। পুলিশ বলছে, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে দুই মাদ্রাসাছাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন।
আটক চারজন হলেন কুষ্টিয়া শহরের জগতি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইবনি মাসউদ (রা.) মাদ্রাসার শিক্ষক ও জেলার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মো. আল আমিন (২৭), শিক্ষক ও পাবনার আমিনপুর থানার দিয়াড় বামুন্দি এলাকার আজিজুল মণ্ডলের ছেলে মো. ইফসুফ আলী (২৬) এবং একই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্র ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর গ্রামের সমসের মৃধার ছেলে মো. আবু বক্কর ওরফে মিঠন (১৯), জেলার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর (গোলাবাড়িয়া) এলাকার মো. সামছুল আলমের ছেলে মো. সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)।
আজ রোববার বিকেল সাড়ে তিনটায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মুহিদ উদ্দীন।
খবর প্রথম আলোর সৌজন্যে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া পৌরসভার সচিব কামাল উদ্দীন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সাংবাদিকদের কাছে পুলিশের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাওলানা মামুনুল হক ও সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে আবু বক্কর ও সবুজ ইসলাম গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছেন। ঘটনার রাতে তাঁরা দুজন একসঙ্গে মাদ্রাসা থেকে হেঁটে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে পাঁচ রাস্তার মোড়ে যান। ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যবহৃত বাঁশের মই বেয়ে দুজন ওপরে ওঠেন। এরপর সবুজ পিঠে থাকা ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করেন। দুজন মিলে ভাস্কর্য ভাঙচুর করেন। ৮ মিনিট ধরে ভাঙচুরের পর তাঁরা আবার হেঁটে মাদ্রাসায় ফিরে যান। শনিবার সকালে তাঁরা বিষয়টি মাদ্রাসার শিক্ষক আল আমিন ও ইফসুফকে জানান। তাঁরা দুই ছাত্রকে পালিয়ে যেতে বলেন। দুই ছাত্র পরে তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।
আপনার মতামত দিন: