SAHA ANTAR
Published:2021-03-17 15:53:08 BdST
বাতাসে দূষণ,দিল্লি-ঢাকা এখন টুইন-সিটি
বাতাসে দূষণ,দিল্লি-ঢাকা এখন টুইন-সিটি
অন্তর সাহা
সহযোগী সম্পাদক
ডাক্তার প্রতিদিন, কলকাতা
বাতাসে দূষণ,দিল্লি-ঢাকা এখন টুইন-সিটি। দূষিত বাতাসের শ্রেষ্ঠতার দৌড়ে দিল্লি প্রথম। রিলে রেসের দ্বিতীয় ঢাকা।
কথা একদম সত্যি।
বিগত বছরে বিশ্বজুড়ে লকডাউনে বাতাসে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান পিএম ২.৫ এর গড় হার কমলেও অধিকাংশ দেশেই তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি ছিল। সবচেয়ে বেশি দূষণের রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে নয়া দিল্লির পরেই ছিল ঢাকা। বিশ্বজুড়ে বায়ু দূষণের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণে এই চিত্র উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার ‘২০২০ ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর ১০৬টি দেশের মধ্যে মাত্র ২৪টি দেশে বাতাসে পিএম ২.৫ এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচওর মান মাত্রার মধ্যে ছিল। চীন এবং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই পিএম২.৫ এর উপস্থিতি মান মাত্রার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ছিল। কোনো কোনো এলাকায় তা ছয় থেকে আট গুণ বেশি ছিল।
যানবাহনের ধোঁয়া ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তৈরি হয় পিএম ২.৫। একে ফুসফুস ক্যানসারের এজেন্ট হিসেবে শনাক্ত করেছে ডাব্লিউএইচও।
ডাব্লিউএইচওর মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২.৫ থাকলে তাকে সহনীয় বলা যেতে পারে। সেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, মঙ্গোলিয়া ও আফগানিস্তানে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫ ছিল ৭৭ থেকে ৪৭ মাইক্রোগ্রামের মধ্যে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর ছিল নয়া দিল্লি (প্রতি ঘনমিটারে ৮৪ মাইক্রোগ্রাম)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত রাজধানী ঢাকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম২.৫ ছিল ৭৭ মাইক্রোগ্রাম। যে ২০টি শহরে সবচেয়ে বেশি দূষণ ছিল তার মধ্যে জাকার্তা, কাঠমাণ্ডু, ইসলামাবাদ, হ্যানয় ও বেইজিং রয়েছে।
ইউরোপের অর্ধেকের বেশি শহরের বাতাসেই পিএম ২.৫ এর উপস্থিতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান মাত্রার বেশি ছিল। দাবানলের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণ ছিল।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুয়ায়ী, মহামারির মধ্যে কয়েক মাস ধরে লকডাউনে আংশিক বা পুরোপুরিভাবে পরিবহন ও শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় বিশ্বজুড়ে পিএম২.৫ দূষণ কমেছে। বেইজিংয়ে ১১ শতাংশ, শিকাগোয় ১৩ শতাংশ, নয়া দিল্লিতে ১৫ শতাংশ, লন্ডনে ১৬ শতাংশ এবং সিউলে ১৬ শতাংশ কমেছে।
ভারতের শহরগুলোর মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশের বাতাস ২০১৯ সালের চেয়ে ভালো ছিল। আর সবগুলোর বাতাসই ২০১৮ সালের চেয়ে বেশি পরিষ্কার ছিল।
প্রতিবেদনের সহলেখক সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) লিড অ্যানালিস্ট লাউরি মিলিভিরতা বলেন, ‘২০২০ সালে বিশ্বের অনেক অংশেই বাতাসের গুণগত মানে নজিরবিহীন উন্নতি হয়েছে। তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী।’
এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে বছরে গড়ে প্রায় তিন বছর করে মানুষের আয়ুষ্কাল কমছে। এ থেকে ৮০ লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।
সেখানে সাম্প্রতিক গবেষণার তথ্য অনুয়ায়ী, ঘরের বাইরে বায়ু দূষণের কারণে বিশ্বে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যুর হিসাব পেয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বায়ু দূষণে চীনে গড়ে ৪.১ বছর, ভারতে ৩.৯ বছর এবং পাকিস্তানে ৩.৮ বছর আয়ুষ্কাল কমছে।
আপনার মতামত দিন: